আগামীকাল আড়ানী পৌরসভা নির্বাচন: সংঘর্ষের পরে আবারও সংঘাত থম-থমে এলাকা
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি : আজ শনিবার (১৬-জানুয়ারি)বাঘার আড়ানী পৌরসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বুধবার(১৩-জানুয়ারি) রাতে আ’লীগের দলীয় এবং বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দফায়-দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, ককটেল নিক্ষেপ ও গুলা গুলির পর বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রার্থীদের নিয়ে সেমিনার করেছেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার। তার পরের রাতে ফের সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় ৪ নং আড়ানী নুরনগর ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান(৪৫)ও তার ভ্যাগনা আরিফ(৩৫)কে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পৃথক দুটি ঘটনার পর থেকে এখন থম-থমে অবস্থা বিরাজ করছে আড়ানী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে বাজার এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে পুলিশ। চলছে ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহ সহকারি পুলিশ সুপার এবং র্যাবের টহল দল।
আড়ানী নুরনগর গ্রামের লোকজন জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১০ টার সময় আকষ্মিক ভাবে বজলুর বাড়ির সামনে সোর-গোল শুনতে পাই। সেখানে গিয়ে দেখি,বজলুর রহমানও তার ভ্যাগনা আরিফ আহত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এ সময় বজলুর রহমানের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে আশিক সহ তার লোকজন টাকা দিবিনা যাবি-কই, বলে ঘটনা স্থাল থেকে সরে যাই।
আশিক জানায়, আমরা সবাই নৌকার ভোট করছি। বজলু ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক টাকার ভাগ না দেওয়ায় তাকে মারপিট করা হয়েছে। তবে বজলু দাবি করেছেন পুর্ব শত্রুতার জের ধরে তাদের মামা-ভ্যাগনাকে মারধর করেছে আশিক, শাকিল, সজল, হাফেজ ও রাজিত।
প্রসঙ্গত বুধবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে আড়ানী বাজার তালতলায় আ’লীগের দলীয় মেয়র প্রার্থী শহীদুজ্জামান শহীদ এর পক্ষে কাটাখালি পৌর সভার নবাগত মেয়র আব্বাস আলীর উস্কানি মূলক বক্তব্য কে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে বলে উল্লেখ করেন স্থানীয় লোকজন। এ ঘটনায় উভয় পক্ষ থেকে থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হযেছে। ঘটনার দিন রাতে বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলীর এক কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
আ’লীগ দলীয় প্রার্থী শহীদুজ্জামান শহীদ জানান, তাঁর পক্ষে আহত হয়েছেন-তুষার আলী ও লাল্টু।এদের দু’জনকে পাশ্ববর্তী পুঠিয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা দেয়ার পর রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অপর দিকে মুক্তার আলী জানান, আমি নিশ্চিত পাশ করবো জেনে শহীদুজ্জামান শহীদ তার লোকজন দিয়ে আমার কর্মীদের উপরে হামলা করে। এ ঘটনায় আমি নিজে সহ আমার কর্মী নাজমুল হক, রানা, বকুল, মজনু, খোকন, ফারুক,জিসান, হৃদয়, জাহিদ, রাজু ও আরিফুল-সহ ১৩ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে নাজমুলের অবস্থা গুরুত্বর। তাকে রামেক হাসপাতালের ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, দুই পক্ষের দফায়-দফায় সংঘর্ষে রাস্তার পাশ দিয়ে ঢেকে রাখা বেশ কিছু সবজির দোকান ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রাতের ঘটনার পর থেকে শুক্রবার সকাল ১০ টা পর্যন্ত কোন ব্যাবসয়ী তাদের দোকান খোলেনি।
বাঘা থানা অফিসার ইনচার্জ(ওসি)নজরুল ইসলাম জানান, বুধবার রাতে উপজেলা প্রশাসন সহ পুলিশ এবং র্যাব এসে দুই পক্ষের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রন করেছেন। তবে পরদিন বৃহস্পতিবার রাতে বজলুও তার ভ্যাগনাকে মারপিটের ঘটনায় কোন অভিযোগ তিনি পাননি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাজার এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ওসি।
উপজেলা সহকারি রিটানিং অফিসার ও নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারকে নিয়ে বৃহঃবার আড়ানী ইউনিয়ন পরিষদে সকল প্রার্থীদের নিয়ে সেমিনার করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচন অফিসার মজিবুল আলম জানান, সুষ্ট ও সুন্দর পরিবেশে নির্বাচন সফল করার লক্ষে ইতোমধ্যে সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহন করেছে উপজেলা নির্বাচন কমিশন। এ পৌর সভায় ৯ টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫ টিকে ঝুকিপূর্ণ হিসাবে চিহৃত করা হয়েছে। এখানে পৃথক-পৃথক কেন্দ্রে মেয়র পদে ৪ জন ভোট দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ইতোমধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে একজন প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়েছেন।
এ দিক থেকে মেয়র পদে ভোট দিবেন দিবেন ৩ জন , সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৯ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১০ জন । এ পৌর সভায় মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ৮৮৪। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ হাজার ৮৭৮ ও নারী ভোটার ৭ হাজার ১০৬।