আওয়ামীলী ও স্বতন্ত্রের শঙ্কা বিএনপি ব্যস্ততার মধ্যে তৃমুখী লড়াই
আড়ানী পৌর নির্বাচন-২০২১
লালন উদ্দীন, বাঘা (রাজশাহী)ঃ রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে জোরে সোরে বইতে শুরু করেছে ভোটের হাওয়া। চলছে জমজমাট প্রচারণা। ঘরোয়া বৈঠকের পাশাপাশি নিয়মিত গণসংযোগ করছেন প্রার্থীরা। ধানের শীষ নিয়ে শক্ত করে পাল তুলেছে বিএনপি আর নৌকা ঘরে তুলতে তোড়জোড় শুরু করেছে আওয়ামীলীগ। অপরদিকে আওয়ামীলীগ বহিস্কৃত বিদ্রোহী প্রার্থীও আসা করছেন সন্তষ্টজনক ফলাফল। ফলে ১৬ জানুয়ারি নির্বাচনে তৃমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে ভোটাররা ধারণা করছেন।
এবারই দ্বিতীয় ধাপে পৌর মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ যেভাবে দাপটের সঙ্গে দৌড়ঝাঁপ করে যাচ্ছে, প্রতিপক্ষ বিএনপি ও স্বতন্ত্র তেমনটা পারছে না। হুমকি-ধামকির ভয় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদের। নির্বাচনের মাঠে নেতাকর্মীদের পিছু টেনে ধরছে সেই শঙ্কা। তবুও জয়ের কৌশলগত কারণেই রীতিমতো কোমর বেঁধে নেমেছে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপির পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী।
যদিও দুই দলের মাঝেও আছে কোন্দল। সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো অবস্থাও নেই আওয়ামীলীগ। তবে বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিস্কারের পর দলীয় প্রতীকে ভোটের হাওয়ায় অনেকটাই গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে আওয়ামীলীগ। উপজেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ অঙ্গ সংগঠনের আগ্রহী নেতা কর্মীরা স্ব-উদ্যোগেই আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে আছেন। অণ্যদিকে চলমান দুঃসময়ে পৌর নির্বাচনকে ইস্যু হিসেবে কাজে লাগাতে চায় আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী প্রার্থী।
তবে বিএনপির কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে চমক দেখাতে পারে আওয়ামীলীগ।
আওয়ামীলীগের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, প্রার্থী মনোনয়নে স্বচ্ছতার বিষয়ে মনোনয়ন বঞ্চিত অনেক প্রার্থীর সংশয় রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামীলীগের প্রবীণ এক নেতা বলেন, স্থানীয় রাজনীতিতে নানা গ্রুপিং ও মেরুকরণের কারণে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়ন না দেওয়ার বিষয়টি তাঁদের ভাবিয়ে তুলেছে।
অন্যদিকে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর নেতাকর্মীরা শঙ্কিত একটি বিষয়ে। সেটি হচ্ছে, আদৌ নির্বাচনী মাঠে তাঁরা থাকতে পারবেন কি না। বাঘা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ফকরুল হাসান বাবলু বলেন, দলীয় প্রার্থীর প্রচারনায় কর্মীদের বাঁধা প্রদানসহ ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব বিস্তার নির্বাচনের পরিবেশ বিঘিœত করছে। তাদের এসব অভিযোগ আমলে নেয়নি আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী শাহিদুজ্জামান শাহিদ। ক্ষমতাসীন দলের যুবক ছেলেরা মাঠ ধরে রাখতে মহড়া দিতেই পারে এমনি মন্তব্য করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপির একক প্রার্থী অতীতের মতো নির্বাচনে সবাই দলীয়ভাবেই ধানের শীষ প্রতীকে তোজাম্মেল হকের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কূটকৌশলের মাধ্যমে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে পরাজিত করার কৌশল নিয়েছে। তবে বস্কিারের পরও বিদ্রোহী প্রার্থীর সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামীলীগ সক্রিয় নেতা-কর্মীরাও আশা করছেন সন্তষ্টজন ফলাফল।
এদিকে প্রচারণার মাঠে বিএনপি ও আওয়ামীলীগ স্বতন্ত্র প্রার্থীকেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ধরে নির্বাচনী ছক কষছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ। বিএনপির আশঙ্কা, দলীয় অভ্যন্তরের কোন্দল এবার ভোটের মাঠে সবচেয়ে বড় ‘কাল’ হয়ে দাঁড়াবে। উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ফকরুল হাসান বাবলু বলেন, প্রচারণা চালাতে কর্মীদের মাঠ ছাড়ার হুমকি ধামকির ভয় দেখালেও জঘন্য কোনো ষড়যন্ত্র ছাড়া নির্বাচনে কাক্ষিত ফলাফলের কোনো হেরফের হবে না। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল বলেন, বর্তমান অবস্থায় দলের ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। পরিস্থিতি যা-ই হোক, নির্বাচনী লড়াইয়ে দলে কোন্দল নেই। কোন্দলে বিপর্যস্ত বিএনপির প্রার্থীর সুবাদে জয়ের ব্যাপরে পুরোপুরি আশাবাদি তিনি।
ভোটাররা বলেন, মাদক মুক্ত পৌরসভা আর যানজট মুক্ত শহর চান তারা। তবে সে রকম প্রার্থী দেখছেন না তারা। তাঁদের দাবি, টাকায় বিকানো মৌসুমি পিকেটাররা হুঙ্কার ছেড়ে ফাঁকা মাঠে গোলের সুযোগ খূজছেন। তাই দিনক্ষণ ঘনিয়ে আসলেও নির্বাচন নিয়ে মাতামাতিতে নেই সাধারণ ভোটাররা। তবে সব কিছু উপেক্ষা করেই প্রার্থীরা এখন ব্যস্ত প্রচারণায়। জাতীয় সংসদের মতো স্থানীয় নির্বাচনেও দ্বিতীয় ধাপে দলীয় প্রতীকে মেয়র পদে নির্বাচন হতে যাওয়ায় দলীয় সমর্থনই এখন ‘মুখ্য’ বলে স্বীকার করেছেন প্রার্থীরা। তাই ভোটারদের আকুণ্ঠ সমর্থন পেতে সচেষ্ট রয়েছেন তারা।
উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জনা গেছে, এখানে মেয়র পদে চারজান প্রার্থী মনোনয়ন জমা দেয়ার পর একজন সংবাদ সম্মেলনের মাধেমে নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়েছেন। তিনি হলেন তরুন ছাত্রলীগ নেতা রিবন আহাম্মেদ বাপ্পী। এ দিক থেকে এখন মেয়র প্রদে প্রচারনায় রয়েছেন ৩ জন, কাউন্সিলার পদে ৩১ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলার পদে ১০জন।
স্থানীয় লোকজন জানান, নির্বাচনের শেষ মুহুর্তে এসে মেয়র এবং কাউন্সিলর প্রার্থীরা নিজ-নিজ ওয়ার্ডে নানা উন্নয় করার প্রতিশ্রুতি দেয়ার আশ্বাস ব্যাক্ত করছেন। তবে একাধিক সুত্র বলেন, নির্বাচন থেকে রিবন আহম্মেদ বাপ্পী সরে দাড়ানোর পরে তার লোকজন বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তারের দিকে ঝুকেছেন। এতে করে দিন যত অতিবাহিত হচ্ছে মুক্তার আলীর জন সমর্থন ততটায় বাড়ছে।
মুক্তার আলী বুধবার এক পথ সভায় বলেন, আমি রাজনীতি করি মানুষের কল্যাণের জন্য, মেয়র হতে চাই মানুষের সেবা করার জন্য। দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে চলেছে। বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তার পিতার আদর্শে অনুপ্রানিত হয়ে ভালো কাজের স্বীতৃতি সরুপ আন্তর্জাতিক ভাবে খ্যাতি অর্জন করেছেন।
আমি তাঁর পথ চলাকে অনুসরণ করতে চাই। যদিও রাজনৈতিক ম্যার প্যেচে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তথাপি আমি কথা দিয়ে যচ্ছি, আমার কাছে প্রতীক কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, আমার কাছে এখন প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যাক্তি। আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ড, ২৯ টি মহল্লা নিয়ে গঠিত পৌর সভা, মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ৮ শত ৮৪ আশিটি । আগামী ১৬ জানুয়ারি ভোট অনুষ্ঠিত হবে কে বিজয়ের মালা শাহিদুজ্জামান শাহিদ, তোজাম্মেল হক, না মুক্তার আলী।