অপরাধখবরলীডসারাদেশ

রাজশাহীতে নির্বাচন কমিশনার সেজে প্রতারণা || মূল হোতা গ্রেফতার

রাজশাহী প্রতিনিধি :- রাজশাহী সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীর সঙ্গে প্রতারণা করা সেই ভুয়া নির্বাচন কমিশনারকে (ইসি) গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।
শুক্রবার (১৬ জুন) দিবাগত গভীর রাতে ঢাকার শেখের টেক এলাকা থেকে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম তাকে গ্রেপ্তার করেছে। পরে তাকে নিয়ে আসা হয়েছে রাজশাহীতে।
গ্রেপ্তারকৃত সেই মূল প্রতারকের নাম গিয়াস উদ্দিন (৪৫)। সে চট্টগ্রামের কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার পুটিবিলা গ্রামের কবির আহাম্মদের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মহানগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি মামলা রুজু করা হয়েছে।
 শনিবার (১৭ জুন) দুপুর দেড়টায় রাজশাহী মহানগর পুলিশের সদর দপ্তরে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন আরএমপি কমিশনার মো. আনিসুর রহমান।
তিনি জানান, এতদিন নির্বাচন কমিশনার সেজে প্রতারণা করে আসছিলেন এই প্রতারক। তিনি সংঘবদ্ধচক্রের মূলহোতা। সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহযোগিতায় তাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি)। তিনি রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের এক কাউন্সিলর প্রার্থীর সঙ্গে প্রতারণার চেষ্টা করেছিলেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে আনিসুর রহমান জানান, মহানগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আরমান আলীর মোবাইলে ০১৮৭৬৯৫৮০৩২ নম্বর থেকে ৮ জুন সকালে প্রতারক নিজেকে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) আহসান হাবিব খানের পরিচয় দিয়ে কথা বলেন। তিনি প্রথমে নির্বাচন নিয়ে নানান কথাবার্তা বলেন।
এর কিছুক্ষণ পরে প্রতারক ওই প্রার্থীকে আবারও ফোন দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আওয়ালের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। এক পর্যায়ে সিইসির কথা বলে ওই প্রতারক ওই প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা দাবি করেন এবং তাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করলে নির্বাচনে ফলাফল তার বিরুদ্ধে যাবে বলে হুমকি দেন।
প্রতারক ওইদিন আরও দুইবার মোবাইলে ফোন করলে প্রার্থী আরমান আলীর সন্দেহ হয়। তিনি সিইসির নামে অভিনব ওই প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে আর ফোন রিসিভ করেননি। এরপর কাউন্সিলর প্রার্থী আরমান আলী ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার গোলাম মোস্তফার এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার দিনই মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় দুইটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
আরএমপি কমিশনার আরও বলেন, প্রতারণার ঘটনাটি গণমাধ্যমে প্রচার হলে সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহযোগিতায় আরএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) বিজয় বসাকের নেতৃত্বে মহানগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের একটি চৌকস টিম অভিযান শুরু করে। তারা এই প্রতারণায় জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রকে গ্রেপ্তারের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অভিযান চালায়।
গ্রেপ্তার এড়াতে প্রতারক গিয়াস উদ্দিন একের পর এক অবস্থান পরিবর্তন করতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার গভীর রাতে চক্রের মূলহোতা গিয়াস উদ্দিনকে রাজধানী ঢাকার শেখের টেক থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় আরএমপির ডিবি পুলিশের ওই টিম।
এরপর রাতেই তাকে রাজশাহী নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সিইসির নামে প্রতারণার দায়ে গ্রেপ্তার গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে বোয়ালিয়া থানায় মামলা করা হয়েছে।
এর আগে গ্রেপ্তার গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত ব্যক্তিগত সহকারীসহ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নামে প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে এজন্য দেশের বিভিন্ন থানায় আরও তিনটি প্রতারণাসহ অন্যান্য আইনের মামলা রয়েছে।
বর্তমানে গিয়াসের সহযোগী এবং ওই চক্রের অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। শিগগিরই সবাইকে গ্রেপ্তার করা যাবে বলেও উল্লেখ করেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *