বাঘায় পদ্মার চরে ফাল্গুনের বৈরী আবহাওয়া অস্তিকর পরিবেশে ক্লাস করছে চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা

মোঃ লালন উদ্দীন, বাঘা (রাজশাহী) : রাজশাহীর বাঘায় পদ্মার চরে ফাল্গুনের শুরুতে বৈরী আবহাওয়া অস্তিকর পরিবেশে ক্লাস করছে চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। স্কুলটি পদ্মা পাড়ে নির্মিত হওয়ায় জেড়ে উঠা বালুর স্তুপ থেকে এই ফাল্গুনের বাতাসে উড়ে আসছে বালু। ফলে স্কুলে ক্লাস করতে পারছেনা শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারী) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিনা হাওয়ায় বালু উড়ে আসছে স্কুল কক্ষে। সেই বালু পড়ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্লাসে বসে থাকতে পারছে না। এতে বিড়ম্বনায় পড়েছে শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। ফলে বিঘিœত হচ্ছে নিয়মিত ক্লাসের পড়াশুনা।
এ বিষয়ে চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রিয়া খাতুন বলেন, দুই দিন থেকে পদ্মার মধ্যে জেগে উঠা চরের বালু বাতাসে উড়তে শুরু করেছে। এই বালু উড়ে এসে চোখে মুখে পড়ছে। জানালা দরজা বন্ধ করেও বালু রোধ করা যাচ্ছেনা। ক্লাসে ঠিকভাবে বসে ক্লাস করতে পারছিনা।
এই দিকে দুপুর ১২ টার দিকে রাস্তায় চার ছাত্রী বই হাতে করে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিল, এ সময় তাদের সাথে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা হয়। তারা জানান, উড়ে আসা বালু চোখে মুখে পড়ায় স্কুলে থাকতে পাচ্ছিলাম না। তাই স্যারকে বলে বাড়ি যাচ্ছি।
এ বিষয়ে চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা জানান, অসময়ে পদ্মার ভাঙনের মুখে পড়েছে চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয়। পদ্মার ভাঙন থেকে ৫ মিটার দূরে রয়েছে স্কুলটি। তবে স্কুলের মাঠ ও চারটি টিনের ঘর পদ্মায় চলে গেছে। যে কোনো সময় পাকা ভবন পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। স্কুলটি ১৯৭৮ সালে স্থাপিত হয়েছে। ভাঙনের কারনে ১৯৯৮ সালে, ২০১২ সালে ও ২০১৮ সালে স্থানান্তর করা হয়। এবারও অসময়ে পদ্মার ভাঙনের কারণে স্থানান্তর করতে হবে।
এদিকে পদ্মার চরে বড় বড় বালুর স্তুপ হয়ে আছে। এই বালু উড়ে ক্লাস ও অফিস কক্ষে আসছে। ঠিকমত ক্লাসে ও অফিসে বসে থাকতে পারছিনা। কিছু শিক্ষার্থী থাকতে না পেরে ছুটি নিয়ে চলে যাচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা টিফিন নিয়ে বালুর কারনে খেতে পারছেনা। উড়ে আসা বালুর কারনে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মহাবেকায়দায় রয়েছি।
চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক আবদুস সাত্তার বলেন, এই স্কুলে মোট শিক্ষার্থী রয়েছে ৫৩৭ জন। পদ্মা নদী ভাঙতে ভাঙতে স্কুলের মাঠ পদ্মায় চলে গেছে। চার কক্ষের টিনের ঘর সরিয়ে নিয়েছি। স্কুলের ৩ কক্ষবিশিষ্ট পাকা ভবন ও টিনের আরো ৪ কক্ষ ঘর পদ্মার ভাঙন থেকে ৫ মিটার দূরে অবস্থান করছে। বিষয়টি প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে। তারপর বালু উড়তে শুরু করেছে, এতে বড় সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডিএম মনোয়ার বাবলু দেওয়ান বলেন, অসময়ে ভাঙনের কারণে চকরাজাপুর, কালিদাসখালী, লক্ষ্মীনগর মৌজার চিহ্ন হারিয়ে গেছে। বর্তমানে এগুলোর স্থান বলতে কিছু নেই। সম্পূর্ণটা নদীগর্ভে চলে গেছে। তবে স্কুল ভবনটি স্থানান্তর না করলে অসময়ের ভাঙনে যে কোনো সময় নদীগর্ভে চলে যাবে।
এছাড়া অসময়ে ভাঙনে চকরাজাপুর চরের শতাধিক বাড়িঘর ও শত শত বিঘা জমিতে রোপণ করা আমবাগান, কুলবাগান, পেয়ারাবাগান, শাকসবজিসহ বিভিন্ন ফসলি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *