বর্ণীল সাজে সেজে প্রধানমন্ত্রীকে বরণের অপেক্ষায় প্রস্তুত রাজশাহী
আবুল কালাম আজাদ (রাজশাহী) : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৯ জানুয়ারি রোববার রাজশাহীতে আসছে। রাজশাহীতে দিনব্যাপী সফরে ১ হাজার ৩১৭ কোটি টাকার ২৫টি প্রকল্প উদ্বোধন করবেন।এছাড়া একই দিনেই তিনি ৩৭৬ কোটি টাকার আরও ৬টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন সরকার প্রধান। ওই দিন বিকেলে রাজশাহী মাদরাসা মাঠে আওয়ামী লীগ আয়েজিত জনসভায় ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে রাজশাহীতে সাজ সাজ রব,সেজে ছেও বর্ণীল সাজে। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে করার সকল প্রস্তুতিও সম্পন্ন।
নৌকার আকৃতিতে জনসভাস্থল মাদরাসা মাঠে তৈরি মঞ্চ। চলছে মাঠ সাজসজ্জার কাজ।রাতের মধ্যেই সকল কাজ সম্পন্ন হবে।
প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানিয়ে বিলবোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে নগরী। দেয়াল লিখন, আলোকসজ্জা,নৌকার আদলে পিকাপ ভ্যান,প্রাইভেট কারকে ,নৌকার আদলে রুপ দিয়ে চলছে প্রচার প্রচারণা এ জান বাহনগুলো জনসভার দিন চলবে নগরীর রাস্তায় রাস্তায়। এছাড়া নগরীর প্রবেশদ্বার গুলোসহ রাস্তায়,রাস্তায় নির্মান করা হয়েছে রং বেরংয়ের তোরণ ও নানা সাজসজ্জা করা হয়েছে। রাজশাহী বিভাগের সকল জেলা ও নগর আওয়ামী লীগ ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। সভা-সমাবেশ ছাড়াও প্রচার মিছিল, মাইকিং করা হচ্ছে নগরজুড়ে।
২৭-২৮ শুক্রবার,শনিবার মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী যে মঞ্চে বক্তব্য দেবেন সেই মঞ্চে সাজসজ্জার কাজ চলছে জোড়েসরে। পুরো মাঠসহ চারপাশ সাজানোর কাজ প্রায় শেষ । রাজশাহীর এই জনসভায় স্মরণকালের জনসমাগম ঘটবে বলে মনে করছেন দলীয় নেতারা।
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা, উচ্ছ্বাস ও আনন্দের জোয়ার বইছে। নাটোর থেকে চারটি ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নলডাঙ্গা, মাধনগন, নাটোর, মালঞ্চি, আব্দুলপুর থেকে ওই ট্রেনে লোক যাবে রাজশাহীতে। এছাড়া জেলা, ৭টি উপজেলা, ৮টি পৌর ও ৫২টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের নেতৃতে কর্মী-সমর্থকরা সমাবেশে আসবেন।
সমাবেশের আগের দিনই অনেক নেতাকর্মী রাজশাহীতে অবস্থান করবেন। এজন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। কতটি গাড়ি রাজশাহীতে আসবে সেটারও তালিকা করা হয়েছে। জেলার নেতারা উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছেন। সমাবেশের আগেই যেন নেতা-কর্মীদের বহর নিয়ে রাজশাহী শহরে সকলে প্রবেশ করতে পারেন সে লক্ষ্যে যাবতীয় পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, রাজশাহীর বাইরে থেকে যারা আসবেন, তাদের জন্য সর্বোচ্চটা করার প্রচেষ্টা রয়েছে। এছাড়া সমাবেশ উপলক্ষে মাদরাসা মাঠসহ যে ১২টি পয়েন্টে ডিজিটাল মনিটরের মাধ্যমে লাইভ দেখানো হবে। সেখানকার জন্য ৫ শতাধিক স্বেচ্ছাবেসী কাজ করবেন। নির্বিঘ্নে যেন মানুষ আসতে পারে ও সমাবেশ সফল করতে পারে যে লক্ষে যাবতীয় প্রস্তুতিই নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে রাজশাহী নগরী। র্যাব, পুলিশ, গোয়ান্দা সংস্থাসহ পুরো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা বাড়িয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই সমাবেশস্থল মাদরাসা মাঠে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নগরীজুড়ে পোশাকে সাদা পোশাকে পুলিশি ও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। মাদরাসা মাঠে পুলিশি পাহারা বসানো হয়েছে। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা পুলিশি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মাদরাসা মাঠ। জনসাধারণের মাঠে প্রবেশেও এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আশপাশের এলাকাগুলোতে ও পুলিশি নজরদারি ও টহল বাড়ানো হয়েছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়েও পুলিশি পাহারা জোরদার করা হয়েছে।
জানা যায়, মাঠে আমন্ত্রিত অতিথিসহ গণমাধ্যমকর্মীদের বিষয়েও মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নগরীতে চলাচলকারী সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনা হচ্ছে।
র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল রিয়াজ শাহরিয়ার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সকল পর্যায়ে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। পোশাকে, সাদা পোশাকে সমাবেশস্থলসহ নগরী ও যে রুটে প্রধানমন্ত্রী আসবেন সেখানে গোয়েন্দা তৎপরতা আছে। এছাড়া সামাবেশের দিন মাঠে ১০ পেট্রোল র্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া ৩টি রিজার্ভ পেট্রোল থাকবে। পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ প্রধানমন্ত্রীর স্পেশাল ফোর্সের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
এদিকে, মাদরাসা মাঠে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় এই সমাবেশকে সামনে রেখে রাজশাহী মহানগর এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ। ২৭ জানুয়ারি সকাল ৬টা থেকে ৩০ জানুয়ারি সকাল ৬টা পর্যন্ত সব ধরনের অস্ত্র-শস্ত্র বহন, আতশবাজি, পটকা ফুটানো, বিস্ফোরক দ্রব্য বহন, সংরক্ষণ, ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবহার এবং অনুমতি ব্যতীত ড্রোন উড্ডয়ন নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। ঢাকা হেড কোয়ার্টারের পরিকল্পনা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আগে থেকে সোচ্চার রয়েছে পুলিশ।