খবররাজশাহীলীড

“দখল প্রতিযোগিতায় পিষ্ট রাজশাহীর পদ্মা নদী”

আবুল কালাম আজাদ (রাজশাহী):-প্রমত্তা পদ্মা নদী এখন মৃতপ্রায়। বর্ষা মৌসুম ছাড়া সবসময় রাজশাহীর পদ্মা
নদীর বেশির ভাগ স্থানজুড়ে চর পড়ে থাকে। তবে চিকন নাগার মতো করে পানি প্রবাহিত হয় আর বাকি অর্থাৎ ভরা বর্ষায় উজান থেকে নেমে আসা পানির স্রোতে উত্তাল থাকে পদ্মা।
প্রমত্তা পদ্মা নদী এখন মৃতপ্রায় হয়ে ভেঙেচুরে নিয়ে যায় দুই কূল। শহর রক্ষা বাঁধ দিয়ে পদ্মার এক কলে রাজশাহী নগরীকে কোনোমতে রক্ষা করা গেছে। কিন্তু আরেক কূল ভাঙছে দিনের পর দিন। এতে কোথাও কোথাও সীমানা পিলারগুলোও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দুই পারের হাজার হাজার বাড়িঘর ও বিলীন হয়ে গেছে। শুকনো মৌসুম হওয়ায় পদ্মার বুকে এখন বালু আর বালু। কোথাও কোথাও পলি মাটিও জমে আছে। কোনো কোনো চরে চলছে বালু ও মাটি কাটার ধূম। বালু কারবারিরা ড্রেজার দিয়ে বালু ও মাটি তুলে ট্রাকে করে নিয়ে বিক্রি করছে। আবার নদীর পারে গড়ে উঠেছে অবৈধ বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে উজানে ভারতের পানি প্রত্যাহারের কারণে পদ্মা মৃতপ্রায়। পানির সঙ্গে সঙ্গে এখান থেকে হারিয়ে গেছে অন্তত অর্ধশত প্রজাতির মাছ।
সম্প্রতি রাজশাহীতে পদ্মার পার ঘুরে দেখা যায়, নগরীর মাদরাসা মাঠের আশপাশজুড়ে সীমান্ত অবকাশ, সীমান্ত নোঙ্গর, লালন শাহ পার্ক, ফাষ্ট ফুড, কফি বার, পদ্মা গার্ডেন ইত্যাদি নাম দিয়ে রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধ বা পদ্মার তীর ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে নানা অবৈধ স্থাপনা। রাজশাহী সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে বিজিবি এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী ওই প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তুলেছে নদীর জায়গা দখল করে।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের পদ্মা গার্ডেনের পশ্চিম দিকে শহর রক্ষা বাঁধের নিচে অন্তত তিন একর জায়গা দখল করে সেখানে লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন। এরপর শহর রক্ষা বাঁধের ওপর থেকে ওই জায়গাটি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়।
সীমান্ত নোঙ্গর গড়ে তোলার বছর দুয়েকের মধ্যে এর পাশে পশ্চিম দিকে নদীর জায়গা দখল করে শহর রক্ষা বাঁধের নিচে গড়ে তোলা হয় সীমান্ত অবকাশ নামের অন্য একটি ফাস্ট ফুড কর্নার। বিশালাকার এ জায়গায়ও গড়ে তোলা হয়েছে স্থায়ী ভবন। আবার সীমান্ত অবকাশ ঘেঁষে পশ্চিমে একেবারে নদীর মধ্যকার জায়গা দখল করে সেখানে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জন্য প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে তোলারও প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। স্থানটি এরই মধ্যে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে।
লালন শাহ পার্কের ঠিক কয়েক গজ দূরেই নদীর তীর দখল করে শহর রক্ষা বাঁধের নিচে গড়ে তোলা হয়েছে ‘সীমান্ত নোঙ্গর’ নামে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) পরিচালিত একটি ফাস্টফুড কর্নার । বিশালাকার একটি আমবাগ ঘিরে এবং নদীর বেশ কিছু এলাকা দখল করে এখানে ভবন নির্মাণ করে ওই ফাস্ট ফুড কর্নারটি গড়ে তোলা হয়েছে পাঁচ-ছয় বছর আগে। এর পর থেকে ক্রমেই নদীর জায়গা দখল করে ফার্স্ট ফুড কর্নারের বিস্তার করা হচ্ছে। এ নিয়ে রাজশাহীর সাধারণ মানুষের ব্যাপক ক্ষোভ থাকলেও বিজিবি জায়গাটি দখল করলেও কেউ প্রতিবাদে  সাহস পায়নি। এরই মধ্যে নদীর ভেতরও পিলার তুলে গড়া হয়েছে আরেকটি ভবন। বর্ষা মৌসুমে ওই ভবনের নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।
রাজশাহী কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার শফিকুল ইসলাম  বলেন, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ কারাগারের পেছনে দক্ষিণ পাশে নগরীর শ্রীরামপুর এলাকায় পদ্মার তীরের নিচে ২০৮ শতাংশ জমি জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে লিজ নিয়েছে। ১৮৫ বছর ধরে কারা কর্তৃপক্ষ সেই জায়গার খাজনা দিয়ে আসছে।
এরই মধ্যে সেখানে কারা একাডেমি
 করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর বাইরে রাজশাহী নগরীতে পদ্মার পার ঘিরে গড়ে উঠেছে নানা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মখলেছুর রহমান  বলেন, বারবার চিঠি দেওয়ার পরও পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করা হচ্ছে। দখলমুক্ত করতে আমরা ব্যবস্থা শিঘ্রই কঠোর ব্যবস্থা নিবো।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, কিছু জায়গা সৌন্দর্য বর্ধন করে সেগুলো লিজ দেওয়া হয়েছে। এতে বিনোদন পিপাসু মানুষ পদ্মা নদীর ধারে ঘুরতে গিয়ে কিছুটা হলেও প্রশান্তি খুঁজে পাচ্ছে।
বিশিষ্ট নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী জানান, বাংলাদেশের নদীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত নাম পদ্মা। হিমালয় পর্বতমালার গাঙ্গোত্রী নামক হিমবাহ থেকে যাত্রা শুরু করে ভারত অংশে গঙ্গা আর বাংলাদেশের চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জা উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামের পাশ দিয়ে রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী জেলা পেরিয়ে উত্তর দিক থেকে আসা যমুনাকে গোয়ালন্দ নামক স্থানে ধারণ করে চাঁদপুরের মোহনায় মিলিত হয়েছে পদ্মা নাম নিয়ে। তিনি বলেন, ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মা ও এর শাখা- প্রশাখাগুলো এখন ধুঁকছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *