খবরধর্মরাজশাহীলীডসারাদেশ

ছুরি-চাপাতি তৈরিতে ব্যস্ত কামাররা

মোঃ লালন উদ্দীন,বাঘা রাজশাহী : কিছুদিন পরই দেশ জুড়ে পালিত হবে মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদিল আজহা । ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন ছুরি-চাপাতি তৈরিতে বাঘা উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন পরিষদেরর কামাররা।
আসন্ন ঈদুল আজহাতে কোরবানির পশু জবাই ও মাংস প্রস্তত করতে চাই ধারালো ছুরি, চাপাতি, দা, বটি ও কুড়াল। তাই কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কয়লার আগুনে লোহা পুড়িয়ে এসব তৈরি এবং পুরনোগুলো শাণ দিয়ে ধারালো করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন বাঘা উপজেলার কামাররা। এসব মালামালের চাহিদা পূরণে কামাররা দিন-রাত কাজ করছেন। জমজমাট হয়ে উঠেছে কামারপাড়া। এ ব্যস্ততা চলবে ঈদের দিন পর্যন্ত। গত কয়েকদিন রাজশাহীর বাঘাতে কামারপাড়া ঘুরে এমনটাই দেখা গেছে।
বাঘা উপজেলার বাঘা পৌর শহরের নারায়নপুর, বাঘা বাজার, চন্ডিপুর, আড়ানী পৌর এলাকার আড়ানী বাজার, রুস্তপুর বাজার,কটারমোড়, আড়ানী রেল স্টেশন, বাউসা ইউপির দিঘা বাজার, বাউসা বাজার, তেঁথুলিয়া বাজার, আড়ানী ইউপির হরিপুর বাজার, পাচঁপাড়া বাজার, চক-বাউসা বাজার, মনিগ্রাম ইউপির মনিগ্রাম বাজার, বিনোদপুর বাজারর, মিরগঞ্জ বাজার,পাকুড়িয়া ইউপির পানিকামড়া বাজার, আলাইপুর বাজার,কেশবপুর বাজার,গড়গড়ি ইউপির খায়েরহাট বাজার, সরেরহাট বাজার,খানপুর বাজার,বাজুবাঘা ইউপির চন্ডিপুর বাজার,জোতরাঘব বাজার, বারখাদিয়া বাজার, পিরগাছা বাজার,চকরাজাপুর ইউপির চকরাজাপুর বাজার, পলাশী বাজারসহ ছোট-বড় সকল হাটে ঘুরে দেখা যায় সেখানকার কামাররা ছুরি চাপাতি তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।
কোরবানি দিবেন এমন পরিবারের সদস্যরা বা কোরবানির দায়িত্ব পাওয়া কসাইরা নিজেদের চাহিদামতো দা, ছুরি, চাক্কু, চাপাতি, কুড়াল, বটি বানাতে ছুটছেন কামারদের কাছে। তাই গরম লোহা পেটানোর ‘ঠং ঠং’ শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে বাঘা উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন পরিষদের কামারপট্টিগুলো।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, একের পর এক ক্রেতা এসে বাঘার কামারপট্টির দোকানে ভিড় করছেন। সকাল, দুপুর ও রাতের খাবার কামাররা দোকানে বসেই খেয়ে নিচ্ছেন। পুরোনো দুটি দা, একটি বটি ও একটি ছুরিতে শাণ দেওয়ার জন্য কামররা ২৫০ টাকা রখছেন। অন্য সময়ে এর মজুরি দেড়শ টাকার মতো। আর নতুন একটি ছোরা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, বিভিন্ন সাইজের চাক্কু ৫০ থেকে ১০০ টাকা, বটি দুইশ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। ক্রেতারা জানান, অন্য সময়ের চেয়ে এখন দ্বিগুণ দাম রাখা হচ্ছে।
কামারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোরবানির ঈদের সময় তাদের যে বেচাকেনা হয় তা অন্যকোনও সময়ে হয় না। তাই এ ঈদের আগে পেশাজীবী কামারদের সচ্ছল হওয়ার মোক্ষম সময়। অনেক কামার আগে থেকেই এসব মালামাল প্রস্তত করে ঈদের সময় বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করে থাকেন।
কামাররা জানান, এ পেশায় পরিশ্রম অনুযায়ী তারা মূল্য পান না। বাজারে লোহার দাম বেশি। জীবিকা নির্বাহে কষ্ট হলেও শুধু পরিবারিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ পেশাটিকে এখনও আঁকড়ে আছেন অধিকাংশ কামার।
নারায়নপুর বাজারের প্রেমা কর্মকার বলেন, ‘আগে অন্য হাট-বাজারে প্রতিদিন বিভিন্ন লৌহজাত জিনিস বানিয়ে গড়ে পাঁচ থেকে সাতশ টাকা রোজগার হতো। কোরবানির ঈদের আগে লোহার অস্ত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন প্রতিদিন পনেরশ থেকে দুই হাজার টাকা আয় হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘ঈদকে সামনে রেখে আগেই অতিরিক্ত মালামালের অর্ডার নেওয়ায় গত পাঁচদিন থেকে নতুন কাজের অর্ডার নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।’
বাঘা বাজারের কামার বিশ্বনাথ কর্মকার বলেন, ‘এবারের ঈদে দিন-রাতে ২০ থেকে ৩০টি কাজে গড়ে প্রতিদিন খরচ বাদে এক থেকে দেড় হাজার টাকা আয় করছি।’ তিনি বলেন, ‘একটি বড় দা পাঁচ কেজির লোহা দিয়ে তৈরি করে মজুরিসহ সাতশ টাকা, এক কেজির কুড়াল দুই থেকে আড়াইশ টাকা, চাপাতি প্রকার ভেদে তিনশত থেকে পাঁচশ টাকা, বড় ছোরা ওজন ভেদে তিন থেকে সাড়ে ছয়শ টাকা, কুড়াল তিন থেকে চারশ টাকা দরে বিক্রি করছি।’
আড়ানী বাজারের জোতেন কর্মকার বলেন, ‘সারাবছরই আমাদের তৈরি জিনিসের চাহিদা থাকে। তবে কোরবারনির ঈদে পশু কোরবানির জন্য নতুন ছুরি, চাপাতি, চাক্কুর কদর বেড়ে যায়। আমরা এসব জিনিসের চাহিদার কথা মাথায় রেখে আগে থেকেই অনেক জিনিস বানিয়ে রাখি।’

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *