গুদামে ধান-চাল সরবরাহ করতে কৃষক ও মিলারদের অনীহা
আবুল কালাম আজাদ (রাজশাহী);- সরকারি গুদামে ধান-চাল সরবরাহ করতে কৃষক ও মিলারদের অনীহা দেখা গেছে। এছাড়াও রাজশাহী বিভাগের অনেক কৃষক গুদামে ধান দিতে দ্বিধাও করছেন। কৃষকরা জানিয়েছেন, সরকারি দামের চেয়ে -বাজারেই ধানের দাম বেশি। একই কথা চালকল মিল মালিকদের। রাজশাহী বিভাগে দুই মাসে ধান সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ৬ মেট্রিক টন। সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হয়েছে ৩৬ মেট্রিক টন। ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫ হাজার ৭৬৪ মেট্রিক টন। সংগ্রহের হার শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। সিদ্ধ চা হের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৫ হাজার ২৩৭ মেট্রিক টন। সংগ্রহের হার ৩৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। তবে খাদ্য -নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা বলছেন, এখনও সময় আছে ধান-চাল সংগ্রহের। আশা করা যাচ্ছে সময়ের মধ্যে ধান-চাল সংগ্রহ
জানা গেছে, আমন মৌসুম শেষে সরকার ধানের নাম নির্ধারণ করে ২৮ টাকা কেজি। আর সিদ্ধ চালের দাম নির্ধারণ করা হয় ৪২ টাকা কেজি। বাজারে ধান বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি ও চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিতে। কৃষক ও “মিলাররা ধান ও চাল বাজারেই বিক্রি করছেন বেশি। কৃষকরা বলছেন, সরকারি যে নাম তার থেকে বাজারে বেশি নাম পাওয়া যাচ্ছে। তাই বাজারেই বিক্রি করতে হচ্ছে ধান। সরকার নির্ধারিত মূল্যে সরকারি গুদামে ধান-চাল দিলে তাদের ক্ষতি হবে। এই ক্রয় শুরু হয়েছে গত বছরের নভেম্বরের ১৭ তারিখ থেকে চলবে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত। জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস জানিয়েছে, রাজশাহীতে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ২২৪ – মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ৩৩ মেট্রিক টন। জেলায় এক কেজিও ধান সংগ্রহ হয়নি। কিন্তু চাপ সংগ্রহ হয়েছে ১ হাজার ৮৪৮ মেট্রিক টন। জেলার সরকারি নামে চাল প্রদানে মিলারদের সাথে চুক্তি হয় ৫ হাজার ২৬৬ নমেট্রিক টন। চুক্তিকৃত মিল আছে ৩৬টি। চুক্তিযোগ্য মিল আছে ১৪৩টি।
জেলার বোয়ালিয়ায় চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৪৪ মেট্রিক টন। সংগ্রহ শূন্য। পৰা উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার ১ হাজার ৪১৯ মেট্রিক টনের বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ৮৯৪ মেট্রিক টন। মোহনপুরে ১৩৭ মেট্রিক টন থাকলেও সংগ্রহ হয়েছে ৫৫৭ মেট্রিক টন। বাগমারায় লক্ষ্যমাত্রা ৯৮ মেট্রিক টন। তবে এই উপজেলায় সংগ্রহ একেবারে টন। শুন্য। তানোরে ৩৪৯ লক্ষ্যমাত্রায় সংগ্রহ ৫৬ মেট্রিক গোদাগাড়ীতে ২ হাজার ৮৯৬ লক্ষ্যমাত্রায় সংগ্রহ মাত্র ১০ মেট্রিক টন। পুঠিয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ৩৮৩ সংগ্রহ ৭৫ মেট্রিক টন। দুর্গাপুরে ৯৭ মেট্রিক টনের সংগ্রহ হয়েছে ১০০ মেট্রিক টন। চারঘাটে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৫ মেট্রিক টন চালের কিন্তু সেখানে সংগ্রহ শুন্য। বাঘায় কোনো লক্ষ্যমাত্রা না থাকলেও সেখানেও শুন্য। বাগমারা উপজেলার কৃষক আবদুল লতিফ বলেন, স্থানীয় বাজারে আমরা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম পাচ্ছি। শুদামে ধান দিলে অন্যান্য অসুবিধাও আছে। যেমন সরকার নির্ধারিত তাপমাত্রায় ধান শুকানো, ধুলো-বালি পরিষ্কার করা এবং তারপর পণ্য গুদামে পৌঁছে দেওয়া। এছাড়া টাকা পেতে আরও দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চাপাল এলাকার কামान অটোরাইসমিলের মালিক কামাল উদ্দিন জানান, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি থাকলেও তিনি এক কেজি চালও সরবরাহ করেননি। তিনি বলেন ‘বাজারে সবচেয়ে সস্তা ধান স্বর্ণা প্রতি মণ বিক্রি হয় ১ হাজার ২৪০ টাকায়। দাম বেশি হওয়ায় ধান কিনতে পারিনি। সরকারি শুনামে কীভাবে চাল সরবরাহ করব? কামালের অভিযোগ, বড় মিল মালিকরা চড়া দামে ধান কিনছেন, ফলে ধানের দাম বাড়ছে। রাজশাহী চালকল মিল মালিক সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, ধান থেকে চাল উৎপাদন করতে প্রতিকেজিতে কৃষকদের খরচ হয়েছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা, অথচ সরকার দাম নির্ধারণ করেছে ৪২ টাকা। একারণে মিলাররা সরকারি গুদামে চাল দিতে চাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারকে সহায়তা করার জন্য গত তিন বছর ধরে লোকসানে গুদামে চাল সরবরাহ করছি। এ বছর মিল মালিকদের ক্ষতি হবে কয়েক কোটি টাকা। আগামী মৌসুমে ধান-চালের দাম সমন্বয় করা না হলে সরকারি ক্রয় অভিযান দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হবে না।
রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ইনচার্জ) একেএম ফজলুল হক জানান, আমাদের দামের চেয়ে বাজারেই দাম বেশি। তাই কৃষকরা ধান বাজারেই বিক্রি করছেন। সেজন্য ধান পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু মিলার গুদামে চাল নিচ্ছেন। যারা চাল দিচ্ছেন লাইসেন্স রক্ষার্থে লোকশান করেই দিচ্ছেন।
আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক জিএম ফারুক হোসেন পাটোয়ারী বলেন, ধান-চাল সংগ্রহের এখনও সময় আছে। আমরা ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আশাবাদী। ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নাও হতে পারে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তাদের সাথে কোনো কৃষকের চুক্তি ছিল না। চুক্তি না করার কারণে কৃষকরা ধান সরবরাহ করছেনা।